আপনার কবিতা বিশ্বের সমস্ত মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে বিবস্বানে আপনার কবিতা পাঠান। বিবস্বান এর blog এ আপনার কবিতা নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হবে।
_________________________________________________________________________________
বর্ষার চিঠি
– শ্রীজাত
সোনা, তোমায় সাহস করে লিখছি। জানি বকবে
প্রিপারেশন হয়নি
কিচ্ছু। বসছি না পার্ট টুতে
মাথার মধ্যে
হাজারখানেক লাইন ঘুরছে, লাইন
এক্ষুনি খুব ইচ্ছে
করছে তোমার সঙ্গে শুতে
চুল কেটে ফেলেছ? নাকি লম্বা বিনুনিটাই
এপাশ ওপাশ সময় জানায়
পেন্ডুলামের মতো
দেখতে পাচ্ছি
স্কুলের পথে রেলওয়ে ক্রসিং-এ
ব্যাগ ঝুলিয়ে
দাঁড়িয়ে আছ শান্ত, অবনত
এখানে ঝড় হয়ে গেল
কাল। জানলার কাচ ভেঙে
ছড়িয়ে পড়েছিল সবার
নোংরা বিছানায়
তুলতে গিয়ে হাত
কেটেছে। আমার না, অঞ্জনের
একেকজনের রক্ত আসে
একেক ঝাপটায়
সবাই বলছে আজও নাকি
দেদার হাঙ্গামা
বাসে আগুন, টিয়ার গ্যাস,
দোকান
ভাঙচুর
কিন্তু আমি কোনও
আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না
বৃষ্টি এসে টিনের
ছাদে বাজাচ্ছে সন্তুর…
ঝালা চলছে। ঘোড়া
যেমন সমুদ্রে দৌড়য়
ভেতর-ভেতর পাগল, কিন্তু সংলাপে পোশাকি…
তুমিই উড়ান দিও, আমার ওড়ার গল্প শেষ
পালক বেচি, আমিও এখন এই শহরের পাখি।
---------------------------------------------------------------------------
জিৎ
- মন্দাক্রান্তা
সেন
ছাত্ররা আজ
প্রাণপাত করে লড়ছে
প্রতিবাদ---তার
পারদ ক্রমশ চড়ছে
অনশনে গেছে বিছানার
সাথে মিশে
মানবিকতাকে অন্যায়
ভাবে পিষে
পুলিশ ঢুকিয়ে
মারবে ওদের? পারবে?
বিদ্রোহীদের ভুখা
তেজ আরও বাড়বে
অহিংস রোখ নিখাদ শান্তিপূর্ণ
ক্রূর প্রশাসন
কীভাবে করবে চূর্ণ
এত জ্বালা কেন শাসক
কেষ্টবিষ্টুর
বেশ, দেখা যাক ওরা কতখানি নিষ্ঠুর
এদিকে ক'জন জেদি প্রতিবাদী ছাত্র
এবং ওদিকে কঠোর
শাসক মাত্র
তাদেরকে বলি, যদি ছেলেদের কিছু হয়
এই বিদ্রোহে যদি
হয় প্রাণ সংশয়
ছাড়ব তোমাকে? ছাড়বে মানুষ তোমাদের?
সয়ে যাব নাকি
তোমার দৃষ্টি অন্ধের
প্রতিরোধ আজ দেখতেই
পাচ্ছ না কি?
অন্ধকারেই ওড়ে
একমুঠো জোনাকি
সেই স্ফুলিঙ্গ
জ্বালাবে জ্বালাবে দাবানল
বিদ্রোহী যত অটল
তরুণ তোরা বল—
আমরাও বলি : দু'মুঠো ভাতের দিব্যি
জিতবি জিতবি জিতবি
জিতবি জিতবি।
---------------------------------------------------------------------------
মুক্ত গণতন্ত্র
-
শঙ্খ ঘোষ
সবাই শুধু মিথ্যে
রটায়।
পথগুলি সব দেদার
খোলা -
যার খুশি আয়
বিরুদ্ধতায়।
যথার্থ এই বীরভূমি
-
উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে
এসে
পেয়েছি শেষ
তীরভূমি।
দেখ খুলে তোর তিন
নয়ন
রাস্তা জুড়ে খড়্গ
হাতে
দাঁড়িয়ে আছে
উন্নয়ন।
সবাই আমায় কর
তোয়াজ-
ছড়িয়ে যাবে
দিগ্বিদিকে
মুক্ত গণতন্ত্র আজ।
---------------------------------------------------------------------------
মেঘবালিকার জন্য
রূপকথা
— জয় গোস্বামী
আমি যখন ছোট ছিলাম
খেলতে যেতাম মেঘের
দলে
একদিন এক মেঘবালিকা
প্রশ্ন করলো
কৌতুহলে
“এই ছেলেটা,
. নাম কি রে তোর?”
আমি বললাম,
. “ফুসমন্তর !”
মেঘবালিকা রেগেই
আগুন,
“মিথ্যে কথা । নাম কি অমন
হয় কখনো ?”
. আমি বললাম,
“নিশ্চয়ই হয় । আগে আমার
গল্প শোনো ।”
সে বলল, “শুনবো না যা-
সেই তো রাণী, সেই তো রাজা
সেই তো একই ঢাল
তলোয়ার
সেই তো একই রাজার
কুমার
পক্ষিরাজে
শুনবো না আর ।
. ওসব বাজে ।”
আমি বললাম, “তোমার জন্য
নতুন ক’রে লিখব তবে ।”
সে বলল, “সত্যি লিখবি ?
বেশ তাহলে
মস্ত করে লিখতে
হবে।
মনে থাকবে ?
লিখেই কিন্তু আমায়
দিবি ।”
আমি বললাম, “তোমার জন্য
লিখতে পারি এক
পৃথিবী ।”
লিখতে লিখতে লেখা
যখন
সবে মাত্র দু-চার
পাতা
হঠাৎ তখন ভুত চাপল
আমার মাথায়-
খুঁজতে খুঁজতে চলে
গেলাম
ছোটবেলার মেঘের
মাঠে
গিয়েই দেখি, চেনা মুখ তো
একটিও নেই
এ-তল্লাটে
একজনকে মনে হল
ওরই মধ্যে অন্যরকম
এগিয়ে গিয়ে বলি
তাকেই !
“তুমি কি সেই ?
মেঘবালিকা
তুমি কি সেই ?”
সে বলেছে, “মনে তো নেই
আমার ওসব মনে তো
নেই ।”
আমি বললাম, “তুমি আমায়
লেখার কথা বলেছিলে-”
সে বলল, “সঙ্গে আছে ?
ভাসিয়ে দাও গাঁয়ের
ঝিলে !
আর হ্যাঁ, শোন-এখন আমি
মেঘ নই আর, সবাই এখন
বৃষ্টি বলে ডাকে
আমায় ।”
বলেই হঠাৎ এক
পশলায়-
চুল থেকে নখ- আমায়
পুরো
ভিজিয়ে দিয়ে-
. অন্য অন্য
বৃষ্টি বাদল সঙ্গে
নিয়ে
মিলিয়ে গেল
খরস্রোতায়
মিলিয়ে গেল দূরে
কোথায়
দূরে দূরে…।
“বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়
বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়-”
আপন মনে বলতে বলতে
আমিই কেবল বসে
রইলাম
ভিজে একশা
কাপড়জামায়
গাছের তলায়
. বসে রইলাম
বৃষ্টি নাকি মেঘের
জন্য
এমন সময়
অন্য একটি বৃষ্টি
আমায়
চিনতে পেরে বলল, “তাতে
মন খারাপের কি
হয়েছে !
যাও ফিরে যাও-লেখ
আবার ।
এখন পুরো বর্ষা
চলছে
তাই আমরা সবাই এখন
নানান দেশে ভীষণ
ব্যস্ত
তুমিও যাও, মন দাও গে
তোমার কাজে-
বর্ষা থেকে ফিরে
আমরা
নিজেই যাব তোমার
কাছে ।”
এক পৃথিবী লিখবো
আমি
এক পৃথিবী লিখবো
বলে
ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে
গেলাম
ঘর ছেড়ে সেই ঘর
বাঁধলাম
গহন বনে
সঙ্গী শুধু কাগজ
কলম
একাই থাকব । একাই
দুটো
ফুটিয়ে খাব—
. দু এক মুঠো
ধুলো বালি-যখন যারা
আসবে মনে
. তাদের লিখব
লিখেই যাব !
এক পৃথিবীর একশোরকম
স্বপ্ন দেখার
সাধ্য থাকবে
যে-রূপকথার—
সে রূপকথা আমার
একার ।
ঘাড় গুঁজে দিন
. লিখতে লিখতে
ঘাড় গুঁজে রাত
. লিখতে লিখতে
মুছেছে দিন—মুছেছে রাত
যখন আমার লেখবার
হাত
অসাড় হল,
. মনে পড়ল
সাল কি তারিখ, বছর কি মাস
সেসব হিসেব
. আর ধরিনি
লেখার দিকে তাকিয়ে
দেখি
এক পৃথিবী লিখব বলে
একটা খাতাও
. শেষ করিনি ।
সঙ্গে সঙ্গে
ঝমঝমিয়ে
বৃষ্টি এল খাতার
উপর
আজীবনের লেখার উপর
বৃষ্টি এল এই
অরণ্যে
বাইরে তখন গাছের
নিচে
নাচছে ময়ূর আনন্দিত
এ-গাছ ও-গাছ উড়ছে
পাখি
বলছে পাখি, “এই অরণ্যে
কবির জন্যে আমরা
থাকি ।”
বলছে ওরা, “কবির জন্য
আমরা কোথাও আমরা
কোথাও
আমরা কোথাও হার
মানিনি—”
কবি তখন কুটির থেকে
তাকিয়ে আছে অনেক
দূরে
বনের পরে, মাঠের পরে
নদীর পরে
সেই যেখানে
সারাজীবন
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে,
সেই যেখানে কেউ
যায়নি
কেউ যায় না কোনদিনই—
আজ সে কবি দেখতে
পাচ্ছে
সেই দেশে সেই
ঝরনাতলায়
এদিক-ওদিক ছুটে
বেড়ায়
সোনায় মোড়া
মেঘহরিণী—
কিশোর বেলার সেই
হরিণী ।
---------------------------------------------------------------------------
"যদি আজ
বিকেলের ডাকে
তার কোনো চিঠি পাই ?
যদি সে নিজেই এসে
থাকে ?
যদি তার এতকাল পরে
মনে হয়
দেরি হোক, যায়নি সময়?
"
___ নরেশ
গুহ
---------------------------------------------------------------------------
‘‘বৃষ্টি
চিহ্নিত ভালোবাসা’’
—আবুল হাসান
মনে আছে একবার
বৃষ্টি নেমেছিল?
একবার ডাউন ট্রেনের
মতো বৃষ্টি এসে থেমেছিল
আমাদের ইস্টিশনে
সারাদিন জল ডাকাতের মতো
উৎপাত শুরু করে
দিয়েছিল তারা;
ছোট-খাটো
রাজনীতিকের মতো পাড়ায়-পাড়ায়
জুড়ে দিয়েছিল অথই
শ্লোগান।
তবু কেউ আমাদের
কাদা ভেঙে যাইনি মিটিং-এ
থিয়েটার পণ্ড হলো, এ বৃষ্টিতে
সভা আর তাসের
আড্ডার লোক ফিরে
এলো ঘরে;
ব্যবসার হলো ক্ষতি
দারুণ দুর্দশা,
সারাদিন অমুক নিপাত
যাক, অমুক জিন্দাবাদ
অমুকের ধ্বংস চাই
বলে আর
হাবিজাবি হলোনা
পাড়াটা।
ভদ্রশান্ত কেবল
কয়েকটি গাছ বেফাঁস নারীর মতো
চুল ঝাড়ানো আঙ্গিনায়
হঠাৎ বাতাসে
আর পাশের বাড়ীতে
কোনো হারমোনিয়ামে শুধু
উঠতি এক আগ্রহী
গায়িকা
স্বরচিত মেঘমালা
গাইলো তিনবার!
আর ক’টি চা’খোর মানুষ এলো
রেনকোট গায়ে চেপে
চায়ের দোকানে;
তাদের স্বভাবসিদ্ধ
গলা থেকে শোনা গেল :
কী করি বলুন দেখি, দাঁত পড়ে
যাচ্ছে তবু
মাইনেটা বাড়ছেনা,
ডাক্তারের কাছে যাই
তবু শুধু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই
হৃদরোগ, চোখের অসুখ
!
একজন বেরসিক রোগী
গলা কাশলো :
ওহে ছোকরা, নুন চায়ে
এক টুকরো বেশী লেবু দিও।
তাদের বিভিন্ন সব
জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ
সমস্যায় তবু
সেদিন বৃষ্টিতে
কিছু আসে যায়নি আমাদের
কেননা সেদিন সারাদিন
বৃষ্টি পড়েছিল,
সারাদিন আকাশের
অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে
আমাদের পাশাপাশি
শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন।
আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল !
---------------------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment