Pages

প্রবন্ধ

আপনার প্রবন্ধ বিশ্বের সমস্ত মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে বিবস্বানে আপনার প্রবন্ধ পাঠান। বিবস্বান এর blog এ আপনার প্রবন্ধ নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হবে। 
_________________________________________________________________________________


পাহাড় ভাঙার গান

লেখক - মৃন্ময় ভৌমিক


আট ই মে, ১৮৮৬ সাল শিকাগো শহর। উত্তাল গোটা দেশ শ্রমিক মালিক দ্বন্ধ্বে । আঁট ঘণ্টা কাজের দাবিতে চলেছে আন্দোলন। পুলিশের গুলিতে আঁট জন আন্দোলনকারী শ্রমিকের মৃত্যু। সারা পৃথিবী জুড়ে হাঁটলো ধিক্কার মিছিল। কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশানাল পয়লা মে , মে দিবস বা শ্রমিকের দিন বলে ঘোষণা করলো।

আমি ছোট বেলায় একটা বাস্কের পেটির ওপর তুলিদিয়ে সাইকেল এঁকে কয়েকজন ভোটদিন বলে স্লোগান দিয়ে যেতে দেখেছি । দেখেছি ইউনাইটেড ফ্রন্টের বিজয় মিছিলে লাল আবীর নিয়ে পাগলের মতো খেলা। সাথে ছড়া কেটে স্লোগান। গ্রাফিতি আর ঘুম কেড়ে নেওয়া সলিল চৌধুরীর গণ সঙ্গীত। একটা মুক্তির আনন্দ।কাস্তে হাতে মুক্তির গান। তারপর ভেঙে গিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন । সবাই জেনেছে স্তালিন একটা খুনি। তাই একে একে মুছেছে লাল নিশান আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য। যে করে হোক অধিকার বুঝে নিয়েছে ফিদেল কাস্ত্রো আর চে’র কিউবা যা কেবল আমেরিকা থেকে মাত্র ১১০ মাইলের পথ। এতদিন কেউ যাইনি সেখানে বারাক ওবামা খুলেছেন সেই পথ কিন্তু সন্দেহ আছে কেবল কি শান্তিরবার্তা নাকি আসাটা শুকুর খোঁজ ? নাগাসাকিতে এক সর্ব হারাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে ওবামা কিন্তু স্বীকার করেনি পরমাণুর অন্যায়।

মফরশল ছেঁড়ে চলে এলাম শহরে। কারখানার ভোঁও শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছে। রাত্রে মিলের ঘণ্টায় খাওয়ার সময় বোঝা যেতো । আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে প্রতিদিন জাতিও সঙ্গীতের আগে রামকৃষ্ণের কথামৃত পাঠ করতে হতো । পাঠ করতে হতো বিবেকানন্দের লেখা মন্ত্র । সেই স্কুল পুড়ে গিয়েছিল ৭০ সালে লকশালদের কৃপায়। তারপর থেকে তাদের থামাতে সেই পেটো, গুলি, বন্দুক আজও চলেছে। সেদিনের স্কুল ভোটেও আমাদের স্কুলে বোমা পড়েছে। আমি দেখা ও শোনার মাঝে পার্থক্য খুঁজে পাইনি। একদিন বাড়ি ফিরছি স্কুল থেকে পাশের পাড়ার বিপ্লব’দা বলে গেলো ‘এই বইটা নিজের কাছে রেখে দে গোপনে, পরে এসে নিয়ে যাবো ।’ নিজের কাছে রেখেছিলাম ঠিকই কিন্তু গোপনে পড়ে ছিলাম “ পাহাড় ভাঙার গান ”। ভিতরে ছিল একটা চারু মজুমদারের ছবি। আমিও সেদিন বইটা বুকে জড়িয়ে কেঁদে ছিলাম প্রবীরের মায়ের মতো। যে প্রবীর রায়চৌধুরী কে হাওড়ার পুলিশ বন্দি করে রেখেছিল জেলে । সেই গোপনে জেল থেকে লিখেছিল একের পর এক চিঠি। আমিও বুকের ভিতর আগুন পুষেছি, আমি জানি –“আগুন জ্বলে ওঠার দিন আসছে কমরেড”।

জেল কাটানোর দিন ফুরিয়েছে। অনেকেই বেড়িয়ে এসেছে ।সময় বদলেছে, বদলেছে আমার দেশ। সমরেশ বসুর উপন্যাস ‘মহাকালের রথের ঘোড়া’ কিংবা ‘কালবেলা’ জলন্তি সত্যি। কিন্তু কতটা বদলেছে ? কেবল প্রচ্ছদটা । আজ আর মিলের ঘণ্টা পড়েনা, আজ শত শত কারখানার ভেঙে উঠেছে ফ্ল্যাট। হাজার হাজার বেকারের বুকে পুলিশের বুটের ছাপ। তোলাবাজি, বন্দুক, ছাপ্পা, রিগিং আর রাহাজানি।

কিন্তু এসবের চেয়ে বড় কথা  “আগুন জ্বলে ওঠার দিন কিন্তু এসছে কমরেড”। একটু চোখ মেলো, মুখ তোল । শত শত যুবক রাস্তায় নেমেছে আর তারা অনুদানে বাঁচবে না তারা পড়েছে ভেনেজুয়েলার ইতিহাস । ব্যাঙ্গালোরে পথও এখন দেখে ইঞ্জিনিয়ারদের আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে লাল পতাকা হাতে বিরাট মিছিল । কৃষক হেঁটেছে মাইলের পর মাইলের ফসলের দাবিতে । কবিতা লেখা হচ্ছে, লিটল ম্যাগাজিনের ওপর নেমে আসছে রাষ্ট্রের কোপ। কিন্তু দেখছে না ,দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। আর কতদিন আটকানো যাবে শুনি! সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মত বলি ‘হাত বাড়াও’ বন্ধু হও। নতুন সুর্যের দিন আসছে।


এক জোট হাও...


--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


কেন আমি যুদ্ধে যাবো ?
লেখক – মৃন্ময় ভৌমিক


‘I am’t got no quarrel with them Vietcong’ একেই যুদ্ধ পরিস্থিতি আমেরিকা জুরে তার ওপর আর বড় বোমা ফাটালেন মহম্মদ আলি যাকে কিছুদিন পরে বিশ্ব চিনবে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বক্সার রূপে দেশের প্রতিটি মানুষ ফেটে পড়লো দেশদ্রোহী বলে সালটা ১৯৬৭ তিনি বললেন কেন আমি যুদ্ধে যাবো ? ওরা তো আমাকে নিগ্রো বলেনি হেও করেনি আবার সহানুভূতিও দেখায়নি আমাদের আলাদা করে চিহ্নিত করেছে আমার দেশ আমাদের ওপর কুকুরের মত ব্যবহার করা হয় আবার কেউ এগিয়ে আসে সাহায্যের জন্যে নিজেদের সার্থে যদি এই যুদ্ধ স্বাধীনতা এনে দিতো আমাদের চিন্তা চেতনার, মুক্তি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করত বলতে হতনা আমি নিজেই যেতাম
ওহায়োর ফ্লাইটে নিদ্রা মগ্ন ছেলেটার স্বপ্নে হঠাৎ উকি দিয়ে  মিথাইল শোলোকভ এর লেখা উপন্যাস ফ্লোজ দ্য ডন এরছটা লাইন ডন নদীর পারে বসবাস করা কসাকদের লোকগীতি থেকে  নেওয়া । তারা কেবল তৈরী হয়েছিল যুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রাণপাতের জন্যে। তাদের জীবনে মড়া ছাড়া কিছু নেই, না আছে কবিতা, না আছে গান, না আছে অন্য কিছুর করার স্বপ্ন। কিন্তু এই গানের সুর কিন্তু হঠৎ মুক্তির কথা বলে গেলো। যে মুক্তি খুঁজছিল কসাকরা। ঘুম ভেঙে গেলো ছেলেটার কুড়ি মিনিটের মধ্যে যাত্রী লিখে ফেললেন  - “হোয়্যার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ারস গন”মাত্র তিনটি স্তবক ঝড় উঠে গেলো পৃথিবীতে। ১৯৫৫ সাল, ম্যাকার্থি আমল, কমিউনিস্ট পাকড়াও এর নামে চলছে সাহিত্যিক – শিল্পীদের হেনস্থা। তার মাঝে এই গান। দেশ দ্রোহিতার তকমা জুটেগেল। জো হিকারসন এর আয়োজিত ফোক ফেস্টিভালে সিগার গাইলেন এই গান। এই গানটি আগেও কিংস্টন ট্রায়ো এবং পিটার, পল অ্যান্ড মেরি ‘রা গাইলেও সিগারের মত দ্রুত লয়ে নয়। “ সিং আউট পত্রিকায়” প্রথম ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত হল সেই গান। তখন সিগার তেতাল্লিশ। একুশ বছর বয়েসে গাওয়া গানে বাঁধা পরে  ভিয়েতনাম যুদ্ধে অবিরত মৃতদেহ, অগুনিত কবর, বাসি ফুলের তোরা এবং অনন্ত বিষাদের সুর ...
অন্য দিকে কৃষ্ণাঙ্গদের সমান অধিকারের দাবিতে সিভিল রাইটস মুভমেন্ট। সাম্য আর শান্তি দাবিতে আফ্রিকায় মাটিতে হাঁটা কালো যুবকের নাম তার নেলসান ম্যান্ডেলা। তার দেখানো পথে একই বিন্দুতে হাত ধরাধরি করে গেয়ে উঠেছে – “ হাও মেনি টাইমস মাস্ট দ্য ক্যানন বলস ফ্লাই বিফোর দে আর ফরএভার ব্যানড”।  ১৯৬৩ প্রথম ব্রিটেন আর আমরিকারর টেলিভিশনে শোনা গেলো গানটা। একটা গিটার আর একটা মাউতারগান রুক্ষ চুলের ছেলেটার নাম জিমার ম্যান, ওরফে বব ডিলান। যে সমস্ত কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস মুক্তি পেয়ে ক্যানাডায় পালিয়ে গিয়েছিল তাদের গান।এদের মাঝে আড়ালে পরে গেলেন যুদ্ধ বিরোধী আরও এক মানুষ ওতার কবিতা এবং গান যা ছিল সরাসরি ভনিতাহীন তীক্ষ্ণতর।
ফিল ওকেস ডিলার এর সমবয়সী হলেও কবি চলেগেলেন মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে। ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ওকস লিখলেন – “আই এইন্ট মাচিং এই মোর”। একজন সৈনিকের জবান বন্দি। যে প্রথম দিন থেকে যুদ্ধ করেচলেছে। আদি জনজাতিদের খেদিয়ে, মেক্সিকোর থেকে জমি লুঠ করে যে দেশের প্রতিষ্ঠা, তার প্রতিটি যুদ্ধে মানুষ মারাই তার কাজ। অবশেষে সেও যুদ্ধে না যাওয়ার জেহাদ ঘোষণা করে।
সেদিনের ইরাক যুদ্ধ থেকে সন্ত্রাসবাদের শিকার মালালা ইউসুফ, কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে লড়ে যাওয়া আশাটা শুকুর হয়ে ইরাক সিরিয়া কিংবা ইউক্রেন ,নেরুদা হয়ে শঙ্খ ঘোষ, চারুমজুমদার কিংবা কালবুর্গি,পেরুমল, অধ্যাপক জিন.এন.সাইবাব সার্জিক্যাল স্টাইক
আমি আমারা, তুমি তোমরা এক বচন থেকে বহুবচন, জাতিহীন, ধর্মহীন, রাজনীতিহীন সর্বপরি মৃত্যুহীন,দ্বেষহীণ এক সুন্দর পৃথিবী  মানুষের পৃথিবী জন লেনন, রবীন্দ্রনাথ হয়ে কবীর সুমন অঞ্জন জ্যাস্ট ইম্যাজিন
              কতটা পথ পেরোলে পাখী জিরোবে তার ডানা

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



কবিতা দিবস
লেখক - মৃন্ময় ভৌমিক 



    ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কলেজে কলেজে প্রতিরোধ হয়েছিল, কবিতা পড়া হয়েছিল, অ্যালেন গিসবার্গ কে আমি সেই থেকে চিনেছি। আগুন যে কলমে কি ভাবে ঝড়ে আমি দেখেছি । কিন্তু লোকে আজ কাল অন্য কথা বলে, কবিতাকি আর ভিয়েতনাম থামাতে পারেছে ? পারে না কবিতা যারা পড়ে বা লেখে তারা যে হিংসাকে প্রশ্রয় দেয়না। আচ্ছা রাষ্ট্রসংঘ কি করতে আছে ? ওটা তুলেদিন না, ওখানে বরন খেলার মাঠ করুন কাজে দেবে। আর কবিতা কি পেরেছে তা এই শতকের মেক্সিকানদের ওপর ট্রাম্প যে দাওয়াই দিতে চেয়েছিল তা আটকে দিয়েছে। ভেঙে দিয়েছে কৌলিন্যের প্রাচীর। কিসের জন্যে মেড়ে ফেলা হয় গৌরি লঙ্কেশ কে ? কার ধরে নিয়ে গেলো কবি ভারভারাও কে ? কিসের জন্যে ? আপনার বাড়ির ছেলেটি অথবা মেয়েটি যে বসন্ত উৎসবে শাড়ি পড়ে যায় রবীন্দ্রভারতী সেলফি তুলবে বলে সে এসব ইতিহাস জানে ?
    কি সেই ইতিহাস ? পাঁচ হাজার বছর আগে একজন শিকারি ব্যাধ হরিণের পিছে পিছে সারাদিন ছুটে বেরিয়ে একটা হরিণও মারতে পারেনি। সধ্যাবেলায় গাছের তলায় বসে সে ভাবলো কী খেতে দেয় ছেলেমেয়েদের ? ধুলোর ভিতর বসে তাঁর বিষণ্ণতা আঙুল বুলিয়ে কি লিখছে ওটা ? প্রতীবাদ ? কার বিরুদ্ধে ? রাগ ! হরিণের ওপর ? হরিণ যে প্রতীকমাত্র। একটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে যে কেবল পালিয়ে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায় । মাত্র সাতেরো বছর আগে দিল্লিতে আমেদাবাদের কবি কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, ‘গুজরাটের পর আমি আর কবিতা লিখতে পারবো না।’ ভারতের বিখ্যাত কবি ও লেখক ইউ আর অনন্তস্মৃতি গত লোকসভার নির্বাচনের আগে বললেন, ‘আমি ভারত ছেড়ে চলে যাবো।’ তাঁর বারান্দায় হিন্দু মৌলবাদী করাচীর বিমানের টিকিত ফেলে রেখে গেলেন। যেভাবে নাসিরুদ্দিনকে বলা হলো।কিছুদিন বাদে অসুস্থ কবি ভারত ছেড়ে চলে গেলন করাচীতে নয় আকাশের ওপারে মহাশূন্যে। শতাধিক গ্রন্থে প্রনেতা লেখক কালবুর্গি সকাল সাড়ে আঁটটার স্ত্রীর সঙ্গে ইউলি মুখে তুলছেন, বেল বাজলো দরজা খুলতেই তিন খানা বুলেট তাঁর বুক ফুঁড়ে দিলো। সেই কর্নাটকে সাংবাদিক কবি গৌরি লঙ্কেশ পড়ে রইলেন মুখ থুবড়ে । পেরুমল, একজন তামিল লেখক বিবিসি কে বললেন, ‘আমি আর লিখব না, লেখা ছেড়ে দিলাম।’ আপনারা দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিন.এন.সাইবাব কে চেনে ? একটু চেনার চেষ্টা করতে পারেন কিন্তু।

    রাষ্ট্রের সাঙ্গে একজন কবির কী সম্পর্ক হবে সেটা প্লেটোর পৃথিবী বিখ্যাত হুমকি সত্ত্বেও আজও নির্ধারিত হয়নি। গত বছর গোয়া সাহিত্য উৎসবের সারা দেশের কবি-লেখকদের সমানে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ বললেন, সরকার চিরকাল কবি বিরোধী। সরকার তাদের বিরোধী কিছু লিখলেই গায়ে জ্বালা ধরে । ওকে সরিয়ে দাও কিংবা জেলে পুরে দাও। ওভিদ থেকে শুরু করে অ্যালেন গিসবার্গ কাউকে পৃথিবীতে রাখা যায়নি আসল কথা রাখা যায়না। নেরুদার নামে আজও বিমান বন্দর হতে হতে হয় না। কবিতার সঙ্গে রাষ্ট্রের যে উত্তর বিহীন প্রশ্নের সম্পর্ক , সেটা আছে বলেই কবিতা লেখা হয়, রাষ্ট্রের পরিকাঠামো পালটানোর কথা হয়।  কবিতা শেষমেশ শান্তি, ভালোবাসার কথা বলে। কবিতা ভাঙনের জয়গান গায় যাতে গড়ে ওঠে নতুন গড়ন।

    আজ বিশ্ব কবিতা দিবস, ইউনেস্কো কবিতার মতো প্রাচীনতম একটি শিল্পকে একটা গুরুত্বদিয়ে একটি দিবস করেছে। কবিতা লিখে কোণ কবির টাকাপয়সা, গাড়ি বাড়ি হয়না। তবুও শিকাগো কিংবা শিলিগুড়িতে তিরিশ জন তরুণ মধ্যরাতে মুখে কবিতা নিয়ে উঠে দাঁড়ান। যেন তারা আগুনের সন্তান। তারা টাকা চায়না, পয়সা চায়না, যশ সেতো চঞ্চলা।

    পৃথিবীর প্রাচীনতম কবিতা লেখা হয়েছিল ‘ মেসোপটেমিয়ার’ এই মহাকাব্যের নাম ‘গিলগামেশ’। মাত্র দেড়শো বছর আগে মানুষ জানতে পেরেছে ভারতবর্ষ কবিতার মৃত্তিকার ঘর নয়, গ্রীস নয়, ওটা হবে মেসোপটেমিয়া। “উরাক” নামে এক দেশের রাজার নাম গিলগামেশ। তিনি এক-তৃতীয়াংশ ভগবান। কিন্তু তাঁকে থামানোর জন্যে স্বয়ং ভগবান সৃষ্টি করলেন আর একজন কে, তাঁর নাম এনকিন্ডু। প্রথমে সেছিল বন্য। গায়ে বড় বড় লোম। তাকে সভ্য করে গিলগামেশের সঙ্গে যুদ্ধে করতে পাঠানো হয়। কিন্তু হববত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের – সেই বছর প্রকাশিত হল অ্যান্ড্রু জর্জের একটি মক্ষম অনুবাদ ও টিকা তারওপর ভিত্তি করে তৈরি হল আধুনিক ভাষ্য – গিলগামেশ ঢুকে পড়ে ইরাক যুদ্ধে। তা হলে কবিতায় কোণ সাল লাগেনা না ? দেশ লাগে না? উরাক হয়ে ওঠে আজকের ইরাক। শুভ আর অশুভ মুখোমুখি হবে, লড়াই হবে, ভালোর জয় হবে। ভালোকে বুকে রাখবে, বাদবাকী সব ছুঁড়ে ফেলে দেবে মানুষ। যেভাবে বুকে আজে চ্যাপলিন বুকে আছে হারিয়ে যাওয়া জীবনানন্দ। মেসোপটেমিয়া থেকে কাশ্মীর, ম্যাসিডোনিয়া থেকে কলকাতা, ইনফো থেকে তিব্বত  যত কবিতা লেখা হয়েছে তাঁর শিখরে কবিতা উৎসব। কবিতার দিন।
    ও গো বনলতা , ও গো  মালাল, ওগো তাসলিমা,  ও আমার মোনালিসা,  কবিতা তুমি দু দণ্ড শান্তি দিতে পারো আমাকে আর কেউ না ...  


-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



প্রথিতযশা নজরুল সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের জীবন ও সংগীত সাধনা

লেখক- আহমেদ জহুর

    গত ২৮ জুলাই ছিল উপ-মহাদেশের প্রখ‍্যাত নজরুল সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের লক্ষ্যে তাঁর জীবন ও সংগীত সাধনা নিয়ে এ লেখাটি উপস্থাপন করা হল।

জন্ম ও পারিবারিক জীবন
-------------------------------
ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকিরূপ হিসেবে বিবেচিত ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে। তাঁর বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মায়ের নাম বেগম কওকাবুন্নেসা।
--------
শৈশবেই তাঁর সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ১৯৫৪ সাল থেকে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন।১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন। কমল দাশগুপ্ত ২০ জুলাই, ১৯৭৪ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। এ দম্পতির তিন সন্তান হল- তাহসিন, হামীন ও শাফীন। হামিন ও শাফিন- উভয়েই রকব্যান্ড দল মাইলসের সদস্য।

সংগীত সাধনা
------------------
১৯৪০-এর দশকে তিনি সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এ রেকর্ডের গান ছিল- 'ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ' আর 'প্রীত শিখানে আয়া'
-------
দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন।নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুল সঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
-------
নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাঁর ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।
--------
১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গ-সংস্কৃতি সম্মেলন মঞ্চে কমল দাশগুপ্তের ছাত্রী ও সহধর্মিণীহিসেবে তিনি ছিলেন মুখ্যশিল্পী উভয়ের দ্বৈত সঙ্গীত সকল শ্রোতা-দর্শককে ব্যাপকভাবে বিমোহিত করেছিল।

পুরস্কার ও সম্মননা
-----------------------
শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের 'সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার' হিসেবে পরিচিত 'স্বাধীনতা পুরস্কার' প্রদান করা হয় তাঁকে।
---------
এ ছাড়াও একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক, সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার), নজরুল আকাদেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট, জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক এবং ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ২০১২ সিলের ১২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে 'বঙ্গ সম্মান' পুরস্কার গ্রহণ করেন।

জীবনাবসান
-----------
কিডনি জটিলতায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে তিনি ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

-------------------------------------------------------------------------------------------



No comments:

Post a Comment